Sponsored

Recent Blog Entries

  • Are you looking to dominate Black Ops 6 multiplayer or rank up faster without the stress of sweaty lobbies? U4GM now offers safe and reliable BO6 bot lobbies, along with a helpful guide on how they work and how to get started. Whether you’re grinding camos, leveling up weapons, or just want ea...
  • Quantum computers of the future could dramatically accelerate material discovery and revolutionize machine learning by simulating complex systems or processing massive datasets at unprecedented speeds. However, to make these breakthroughs feasible, quantum systems must execute operations swiftly eno...
  • Drying droplets have long captivated scientists, with fluids like coffee or paint forming intricate patterns as they evaporate. But blood is a far more complex substance—a dense suspension of red blood cells, proteins, salts, and biomolecules—resulting in uniquely detailed structures whe...
View All

Sponsored

ফাতিমা আল-ফিহরি: বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন

  • ফাতিমা আল-ফিহরি: বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে নারী

    শিল্পীর দৃষ্টিতে ফাতিমা আল-ফিহরি; Image Source: arabamerica.com

    আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যামব্রিজ এবং অক্সফোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ১২০৯ এবং ১০৯৬ সালে। তবে পুরো বিশ্বের তো বটেই, এগুলোর কোনোটিই ইউরোপেরও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালির বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১০৮৮ সালে। তারও প্রায় একশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়।

    কিন্তু আল-আজহারেরও প্রায় একশ অনেক আগে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে এগারোশ' বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মরক্কোর কারাউইন ইউনিভার্সিটি। ইউনেস্কো এবং গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ডের রেকর্ড অনুযায়ী এটিই হচ্ছে বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিগ্রী প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা এখন পর্যন্ত একটানা চালু আছে। আর এই ঐতিহাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একজন মুসলিম নারী, ফাতিমা আল-ফিহরি!

    ফাতিমা আল-ফিহরির জন্ম আনুমানিক ৮০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে, বর্তমানকালের তিউনিসিয়ার কাইরাওয়ান শহরে। তার পুরো নাম ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ আল-ফিহরিয়া আল-কুরাইশিয়া। তাদের পারিবারিক নামের কুরাইশিয়া অংশ থেকে ধারণা করা হয় তারা ছিলেন কুরাইশ বংশের উত্তরাধিকারী।

    তিউনিসিয়ার কাইরাওয়ান শহরটির গোড়াপত্তন হয়েছিল উমাইয়া শাসকদের হাতে, ৬৭০ খ্রিস্টাব্দে। নবম শতকের শুরুর দিকে শহরটি হয়ে উঠেছিল ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। সামরিক দিক থেকেও শহরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই শহরে বসবাসরত আল-ফিহরি পরিবারসহ অনেকেই ছিল আর্থিকভাবে অসচ্ছল। ফলে ফাতিমার জন্মের কয়েক বছর পর নবম শতকের শুরুর দিকে কাইরাওয়ান শহরের বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রে শহরটি ছেড়ে ভাগ্যের অন্বেষণে পাড়ি জমায় ইসলামিক মাগরেবের প্রসিদ্ধ শহর, মরক্কোর ফেজের উদ্দেশ্যে।

    ফেজ ছিল তখন ক্রমবর্ধমান কসমোপলিটন শহর। নানা দেশ থেকে নানা ধর্ম, বর্ণ ও পেশার মানুষ সেখানে এসে বসতি স্থাপন করছিল। সে সময় ফেজের শাসক ছিলেন সুলতান দ্বিতীয় ইদ্রিস। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং ন্যায়পরায়ণ শাসক। বিদেশ থেকে আগত অভিবাসীদেরকে তিনি ফেজ নদীর তীরের ঢালু জমিতে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দেন। কাইরাওয়ান থেকে আসার কারণে ফেজে বসতি গড়া এই অভিবাসীদের পরিচয় হয় কারাউইন, তথা কাইরাওয়ানের অধিবাসী নামে।

    শিল্পীর দৃষ্টিতে ফাতিমা আল-ফিহরি; Image Source: illustrationx.com

    ফেজে এসে মোহাম্মদ আল-ফিহরির ভাগ্য খুলে যায়। প্রচণ্ড পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার সন্তানদের জন্য তিনি সুশিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ফাতিমা আল-ফিহরি এবং তার বোন মারিয়াম আল-ফিহরি ক্লাসিকাল আরবি ভাষা, ইসলামিক ফিক্‌হ এবং হাদিস শাস্ত্রের উপর পড়াশোনা করেন

    প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এই ফেজ শহরেই ফাতিমার বাবা তাকে বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছরের মাথায়ই ফাতিমাদের পরিবারে দুর্যোগ নেমে আসে। অল্প সময়ের মধ্যেই তার বাবা, ভাই এবং স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। রয়ে যান কেবল এতিম দুই বোন ফাতিমা এবং মারিয়াম। বাবার রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন তারা।

    মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পিতার কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তি ব্যয় করার ক্ষেত্রে কন্যারা কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য না। ফাতিমা এবং মারিয়ামও চাইলে এই সম্পত্তি যেকোনোভাবে ব্যয় করতে পারতেন। কিন্তু কোনো বিলাসিতার পেছনে ব্যয় না করে তারা সিদ্ধান্ত নেন, এই অর্থ তারা ব্যয় করবেন ধর্মের জন্য, মানবতার কল্যাণের জন্য। সাজসজ্জার কিংবা বিলাসিতার পণ্য ক্রয় না করে সিদ্ধান্ত নেন, তারা ক্রয় করবেন জনগণের ভবিষ্যত।

    কারাউইন মসজিদ; Image Source: Image Source: AP

    কারাউইন মসজিদ; Image Source: Image Source: AP

    ফেজের খ্যাতি তখন দিনে দিনে বেড়েই চলছিল। দেশ-বিদেশ থেকে মুসল্লিরা এসে শহরটিতে বসবাস করতে শুরু করছিল। ফাতিমা এবং মারিয়াম লক্ষ্য করেন, ফেজের কেন্দ্রীয় মসজিদটি শহরের ক্রমবর্ধমান মুসল্লিদেরকে আর স্থান দিতে পারছে না। ফলে তারা সিদ্ধান্ত নেন, বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি দিয়ে তারা পৃথক দুটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। প্রায় কাছাকাছি সময় দুই বোন কাছাকাছি এলাকায় দুটি পৃথক মসজিদ নির্মাণ করেন। মারিয়াম নির্মাণ করেন আন্দালুস মসজিদ, আর ফাতিমা নির্মাণ করেন কারাউইন মসজিদ।

    ফাতিমা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না, এমনকি তার প্রতিষ্ঠিত কারাউইন লাইব্রেরিতেও না। ধারণা করা হয়, তার উপর লিখিত পাণ্ডুলিপিগুলো কারাউইন লাইব্রেরির ১৩২৩ সালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে পুরাতন যে উৎসে ফাতিমার বিবরণ পাওয়া যায়, সেটি হলো চতুর্দশ শতকের ইতিহাসবিদ ইবনে আবি-জারার লেখা ফেজ শহরের ইতিহাস, The Garden of Pages। পরবর্তীতে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুনও ফাতিমার কথা লিখেছেন, কিন্তু তাতে ইবনে আবি-জারার বর্ণনাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

    ইবনে আবি-জারার বিবরণ থেকে জানা যায়, ফাতিমা প্রথমে তার মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় করতে শুরু করেন এবং এরপর ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরের ৩ তারিখে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সেটা ছিল পবিত্র রমজান মাসের এক শনিবার। ফাতিমা শুধু মসজিদ নির্মাণের জন্য অর্থ দান করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি নিজে সার্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত থেকে এর নির্মাণকাজ তদারকি করেছিলেন। এবং শুরুর দিন থেকে শুরু করে নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি দিন তিনি রোযা রেখেছিলেন

    কারাউইন ইউনিভার্সিটি; Image Source: feslamedumaroc.com

    কারাউইন ইউনিভার্সিটি; Image Source: AP

    কিছু বর্ণনা অনুযায়ী, মসজিদটির নির্মাণ সম্পন্ন হতে সময় লেগেছিল ১৮ বছর, যদিও অন্য কিছু বর্ণনা থেকে ১১ বছর এবং ২ বছরের বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেদিন নির্মাণ শেষ হয়, সেদিন তিনি নিজের নির্মিত মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জন্মভূমি কাইরাওয়ানের নামানুসারে তিনি মসজিদটির নাম রাখেন কারাউইন মসজিদ।

    মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ফাতিমা মসজিদের বর্ধিতাংশে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। অল্পদিনের মধ্যেই সেখানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাকরণ, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ইতিহাস, রসায়ন, ভূগোলসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান শুরু হয়। বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় বিষয়ের উপর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ডিগ্রী প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই এটিই প্রাচীনতম, যা এখনও টিকে আছে এবং গত সাড়ে এগারোশ' বছর ধরে একটানা শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে আলোকিত করে আসছে।

    ফাতিমা আল-ফিহরির প্রতিষ্ঠিত কারাউইন মসজিদটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত সমগ্র উত্তর আফ্রিকার বৃহত্তম মসজিদ ছিল। তার মৃত্যুর পর ৯১৮ সালে সরকার মসজিদটিকে অধিগ্রহণ করে এবং একে সরকারি মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করে, যেখানে সুলতান নিয়মিত নামাজ আদায় করতে শুরু করেন। দ্বাদশ শতকের দিকে পুনরায় পরিবর্ধনের পর এটি একসাথে ২২,০০০ মুসল্লিকে ধারণ করার সক্ষমতা অর্জন করে।

    ফাতিমার প্রতিষ্ঠিত কারাউইন মসজিদ এবং কারাউইন ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্র করে ফেজ হয়ে উঠতে থাকে আফ্রিকার ইসলামী শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র। শুধু মুসলমান না, মধ্যযুগের অনেক খ্যাতিমান ইহুদি এবং খ্রিস্টান মনীষীও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন। এর ছাত্রদের মধ্যে একজন ছিলেন পোপ দ্বিতীয় সিলভাস্টার, যিনি এখান থেকে আরবি সংখ্যাপদ্ধতি বিষয়ে ধারণা লাভ করে সেই জ্ঞান ইউরোপে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং ইউরোপীয়দেরকে প্রথম শূন্যের (০) ধারণার সাথে পরিচিত করেছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন বিখ্যাত মালিকি বিচারপতি ইবনে আল-আরাবি, ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুন এবং জ্যোতির্বিদ নূরুদ্দীন আল-বিতরুজি। প্রতিষ্ঠার পরপর ফাতিমা নিজেও কিছুদিন এখানে অধ্যয়ন করেছিলেন

    কারাউইন ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিটিকেও বিশ্বের প্রাচীনতম লাইব্রেরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আগুনে পুড়ে বিপুল সংখ্যক পাণ্ডুলিপি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেও এখনও এতে প্রায় ৪,০০০ প্রাচীন এবং দুর্লভ পাণ্ডুলিপি আছে। এর মধ্যে আছে নবম শতকে লেখা একটি কুরআন শরিফ, হাদিসের সংকলন, ইমাম মালিকের গ্রন্থ মুয়াত্তা, ইবনে ইসহাকের লেখা রাসুল (সা)-এর জীবনী, ইবনে খালদুনের লেখা কিতাব আল-ইবার এবং আল-মুকাদ্দিমার মূল পাণ্ডুলিপিসহ বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ

    ফাতিমা আল-ফিহরি ইন্তেকাল করেন ৮৮০ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠিত কারাউইন মসজিদ, ইউনিভার্সিটি এবং লাইব্রেরি আজও দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত সহস্রাধিক বছরে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পাশ করে বেরিয়েছে। তার স্বদেশী আরব, মুসলিম বিশ্ব এবং সর্বোপরি মানব সম্প্রদায়কে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার ক্ষেত্রে এবং বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ফাতিমার অবদান অপরিসীম।

    কারাউইন লাইব্রেরিতে ইবনে খালদুনের মুকাদ্দিমা; Image Source: AP

    কারাউইন লাইব্রেরিতে নবম শতকের কুরআন শরিফ; Image Source: AP

Sponsored

Sponsors